শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩ ১২:২৩ এএম
নিউজগার্ডেন ডেস্ক: ইসলাম বিশ্বজনীন জীবনাদর্শ। সমগ্র মানব বংশের প্রতিই তার সমান আহ্বান। কোন বিশেষ জাতি, বংশ, গোত্র, সম্প্রদায় বা ব্যক্তির প্রতি তার কোন পক্ষপাত নেই; তার দৃষ্টিকোণ বিশাল, বিস্তীর্ণ, ব্যাপক ও সার্বিক। বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্বের ওপরই তার লক্ষ্য নিবদ্ধ। সেই মহানব্রত নিয়ে ইসলামের সুমহান আদর্শ তুলে ধরতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সিদ্দিকী। তার আসল নাম মুহাম্মদ আবু তাহের সিদ্দিকী। তিনি চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত সাতকানিয়ার ধর্মপুর নামক স্থানে জন্ম গ্রহণ করেন। তাই সবাই উনাকে সিদ্দিকী নামেই চিনে। তাদের প্রাক ইসলামী স্বভাব চরিত্র ও মূল্যবোধে বিরাট পরিবর্তন সাধিত হয়
এবং তাদের মাধ্যমে এক অনুপম সভ্যতা গড়ে উঠে।বিভিন্ন প্রকারের মতবাদের সংমিশ্রনে মুসলমান সমাজে বহু মতানৈক্যের এবং ইসলামী বিশ্বাস ও জ্ঞানের সাথে নানারকম মারাত্মক অনৈসলামিক ধর্ম-বিশ্বাস ও জ্ঞান এমন ভাবে মিশে পড়ে যে, খাঁটি ইসলামী বিশ্বাস ও অনইসলামী বিশ্বাসের মধ্যে পার্থক্য করাই দুরহ হয়ে পড়ে। অত্যধিক পরিমানে পার্থিব জড়বাদের প্রভাবে ধর্ম জ্ঞানের শ্বাস প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয় এবং মুসলমান সমাজে ইসলামী বিশ্বাস ও ধর্মকার্যের ক্ষেত্রে এক চরম বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়। ইহা হতে সমাজকে মুক্ত ও রক্ষা করার দায়িত বোধ থেকেই মুহাম্মদ আবু তাহের ইসলাম বিষয়ে লিখতে মনোযোগী হন। এই ক্ষণজন্মা পুরুষের অতুলনীয় প্রতিভা যে নিপুনতার সাথে এই দায়িত্ব পালন করেন, তাহা সমগ্র দেশ ভক্তি ভরে আজীবন মনে রাখবে।
এই একবিংশ শতাব্দীতে এ দেশে মুহাম্মদ আবু তাহের সিদ্দিকী আমাদের প্রজন্মের একজন গুণী প্রথিতযশা ইসলামী চিন্তাবিদ, লেখক, অনুবাদক, গবেষক ও প্রকাশক হিসেবে বিবেচিত। তিনি বর্তমানে ইসলামিক ফাউণ্ডেশনের হেড অফিসে সিনিয়র উপ-পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ বছরে অবসরোত্তর ছুটিতে যাচ্ছেন। তিনি একজন প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ ও দার্শনিক।
ইসলামিক ফাউণ্ডেশনের বিশাল প্রকাশনার ইতিহাস ঐতিহ্য বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন অবদান রেখেছে। এই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হিসেবে দীর্ঘ ৪০ বছরের বেশি সময় কর্মরত ছিলেন মুহাম্মদ আবু তাহের সিদ্দিকী। ইসলামিক ফাউণ্ডেশনের ৬,৫০০ প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে কমপক্ষে চার হাজার পাঁচশো বইয়ের পাণ্ডুলিপি পরীক্ষা নিরীক্ষা, বইয়ের তথ্যের সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করা এবং সর্বোপরি প্রচ্ছন্ন সহায়তা করে অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছেন। তাঁর লেখায় বস্তুনিষ্ঠতা, দল নিরপেক্ষতার নীতি ইত্যাদি শব্দের ব্যবহার করা হয়েছে।
তিনি ৪২ বছর ধরে ঢাকায় বসবাস করে আসছেন। তাই চট্টগ্রামের চাইতে তিনি ঢাকায় অত্যন্ত জনপ্রিয়। ৮০'র দশকের প্রিন্সিপাল দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ, অধ্যাপক শাহেদ আলী, অধ্যাপক আবদুল গফুর, মাওলানা আবদুর রহীম, মাওলানা শায়খ মুহাম্মদ আবদুল জব্বার (র), কবি মনির উদ্দিন ইউসুফ, কবি আবদুল মুকীত চৌধুরী, কবি মসঊদ-উদ শহীদ, ডঃ আবদুল ওয়াহিদ প্রমুখ কবি সাহিত্যিকগণের সঙ্গে তাঁর সখ্যতা গড়ে ওঠে। তিনি পর্যায়ক্রমে তাঁদের দিকনির্দেশনা সম্বলিত নীতিমালা প্রয়োগ করে ইসলামী সাহিত্য সংস্কৃতির পুস্তক রচনা করেছিলেন।
১৯৮০-৮২'র শুরু পর্যন্ত বায়তুশ শরফের সংলগ্ন বিল্ডিংয়ে ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র থেকে কর্মজীবন শুরু করেছেন। চট্টগ্রামের প্রথিতযশা আল্লামা আবদুল আহাদ আল-মাদানী (র:), প্রিন্সিপাল রেজাউল করিম চৌধুরী, প্রফেসর ডঃ মুঈন উদ্দিন আহমেদ, জেলা ও দায়রাজজ আবদুর রউফ প্রমুখ সমাজ বিজ্ঞানী ব্যক্তিত্বের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে পেরেছেন।
১৯৮২ সালে ঢাকায় হেড অফিসে রাজস্ব পদে নিয়োগ পেয়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় বদলী হয়ে যান। সেখানেই তিনি দীর্ঘ ৪০ বছর ৯ মাস নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে জীবন যাপন করেন। তিনি মুসলমানদের দু:খ লাঘবের পথনির্দেশনা দিয়ে লিখেছেন। মাঝখানে কিছুকাল বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার উপ-পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সেখানে অনাবিল শান্তিতে বসবাস করে ইসলামের নিগূঢ় নির্দেশনা দিয়েছেন সম্পূর্ণ ভয়হীন নিরপেক্ষভাবে।
তিনি ১৯৮১ সালে চট্টগ্রামের জাতীয় দৈনিক নয়া বাংলা পত্রিকায় প্রকাশিত লেখার মাধ্যমে সংবাদপত্র জগতে লেখালেখিতে জড়িয়ে যান। এছাড়া দু’টি পত্রিকায় রাতের শিফটে প্রুফ রিডার হিসেবেও কাজ করেছেন। সেই থেকে চট্টগ্রােেমর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। কিন্তু কর্মব্যস্ততার ফলে চট্টগ্রামে যাতায়াত খুব একটা বেশি হয়নি বলেই স্বীকার করেন।
কোন কাজকে তিনি ছোট মনে করতেন না। বরং ভালো কাজকেই মর্যাদা বীরোচিত সম্মান প্রদর্শন করতেন। এটার জন্য তিনি চট্টগ্রামের তদানীন্তন পরিচালক প্রিন্সিপাল আশরাফ ফারুকীর নিকটও আস্হাভাজন হন।
ঢাকায় গিয়ে হেড অফিসে প্রকাশনা বিভাগের পরিচালক ও ভাষা সৈনিক অধ্যাপক আবদুল গফুরের অধীনে কাজ শুরু করেন। তিনিও তাহের সিদ্দিকীর সৃজনশীল প্রতিভার সন্ধান পেয়ে যান। তাঁর নিকট দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে বস্তুনিষ্ঠ লেখার উদ্দীপনা আরও বেশি পরিমাণে তাকে উৎসাহিত করে। প্রখ্যাত লেখকের লেখা বইয়ের পাণ্ডুলিপি সম্পাদনা পদ্ধতির শিক্ষা নেন। এধরনের মনীষার সংস্পর্শে তাঁর মেধার স্ফূরণ ঘটিয়ে নতুন উদ্যমে অদম্য মনোবলে কাজ করে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ১৯৮৪ সালে অনুষ্ঠিত ওআইসি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের শীর্ষ সম্মেলনে ইসলামিক ফাউণ্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত আল-কুরআনুল করীম প্রকাশিত হয়েছে। যাতে তাহের সিদ্দিকীর দীর্ঘ সময় শ্রম মেধা দিয়ে মাত্র ৩ মাসের মধ্যে সৌন্দর্যমণ্ডিত একটি মহামূল্যবান প্রকাশনা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
২০২০ সাল পর্যন্ত তাঁর লেখা ১৬ টি বই প্রকাশিত হয়েছে। তিনি মারাত্মকভাবে করোনা আক্রান্ত হয়ে শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও লেখালেখি চালিয়ে যান। করোনাকালে ক্ষতিগ্রস্হ হয়েও জ্ঞান সাধনার ক্ষেত্রে চেষ্টা করে যান। করোনাকালীন সময় চোখের অপারেশন ও লেজার রশ্মির সাহায্যে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তবুও নবোদ্যমে পাণ্ডুলিপি রচনার কাজ শুরু করেন। সম্প্রতি তাঁর লেখা ৩ টি বই প্রকাশিত হয়েছে। এ-ই ৩ টি সহ তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১৯ টি। শিশু কিশোরদের জন্যও তিনি লিখেছেন। 'রহমাতুল্লিল আলামীন (সা)' একটি বহুল বিক্রিত বই।
২০২২ সালে প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে 'ফয়জানে রহমত' বইটি মূলত উপমহাদেশের অন্যতম হাফেজে হাদীস (১০ লক্ষের বেশি হাদীসের মুখস্তকারী) আল্লামা মুহাম্মদ আবদুল্লাহ দরখাস্তী (র)-এর। তিনি অনুবাদ, সংযোজন ও সম্পাদনা করেছেন। 'ঐতিহাসিক মদীনার সনদ' বইটি গবেষণাধর্মী সুখপাঠ্য পুস্তক, যা ইসলামের অসাম্প্রদায়িক চেতনার শিক্ষা তুলে ধরে লেখা হয়েছে। 'ইসলামে দাম্পত্য জীবন ও শিশু পরিচর্যা' মুসলমানদের পারিবারিক জীবন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা সমৃদ্ধ পুস্তক প্রকাশিত হয়েছে। তিনি একজন সাদাসিধে লেখক, অনুবাদক, গবেষক ও প্রকাশক হিসেবে বিবেচিত হয়ে আছেন। তাঁর প্রান্জল ভাষায় ও সাবলীলভাবে লেখা বইয়ের ভাষা ও ভাবোদ্দীপনা সমাজের মধ্যে উচ্চ মননশীলতা চর্চা করতে সহায়তা প্রদান করতে পারে। তিনি ৩ সন্তানের জনক। বড় মেয়ে জামাইসহ ডেনমার্কে আছেন। ছোট মেয়ে জাবি'তে আইবিএ অনার্স এবং ছেলে ইন্টার শেষ করেছে।
আমরা মহান আল্লাহর কাছে তাঁর লেখনীর ছন্দ নিয়মিত চর্চা করে ইসলামের শিক্ষা তুলে ধরার জন্য শারীরিক সুস্থতা ও দীর্ঘায়ূ কামনা করি। কেননা, বর্তমানে ইসলাম সম্পর্কে জানাতে লেখকগণ বিভিন্ন ধরনের মতবাদ পেশ করেন। ফলে মুসলিম উম্মাহ মারামারি শুরু করে বারবার হোঁচট খাচ্ছেন। মুহাম্মদ আবু তাহের সিদ্দিকী কর্তৃক লিখিত ও প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে সত্যিকারের একজন সত্যানুসন্ধানী সামাজিকভাবে দায়বদ্ধ হয়ে ওঠার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে তাঁর ক্ষুরধার লেখনী দিয়েই সুস্থ সমাজ গঠনের কাজ করে দেয় এবং মন-প্রাণ খুলে কাজ করে উন্নয়ন করতে পারে। শিক্ষা মানুষকে উন্নত করে। তাকে প্রকৃত মানুষ হতে সাহায্য করে। তবে পাশবিকতার দমনে শিক্ষার যে ভূমিকা থাকা দরকার ছিল বাস্তবে তা কিন্তু দেখা যাচ্ছে না। এই শূন্যতা পুরণে ইসলামী শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। বিশেষ করে মুসলিম প্রধান দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য তা আরো বেশী গুরুত্বের দাবী রাখে। তাহলে আমাদের সমাজ ও দেশ হতে পারে আরো অগ্রসর ও উন্নত। নৈতিকতার উন্নয়ন ছাড়া কখনওই আমাদের সামাজিক ও জাতীয় উন্নয়ন সম্ভব হবে না। ইসলামী শিক্ষাই হলো নৈতক শিক্ষার কেন্দ্রস্থল।
সাবস্ক্রাইব ইউটিউব চ্যানেল
লাইক ফেইসবুক পেইজ
নিউজগার্ডেন ডেস্ক: চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বীরমুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছ... বিস্তারিত
মোঃ খোরশেদ আলম: আজ ১৭ মার্চ জাতির পিতার ১০৩তম জন্মদিন। ১৯২০ সালের এই দিনে রাত ৮টায় টুঙ্গীপাড়ায় জন্... বিস্তারিত
মোহাম্মদ খোরশেদ আলম: আজ ১৫ মার্চ শহীদ মৌলভী সৈয়দ আহমদ এর ৮৩তম জন্মবার্ষিকী। এই বীরের গৌরব গাথা বর্... বিস্তারিত
নিউজগার্ডেন ডেস্ক: হোটেল, রেস্টুরেন্ট এবং ট্রেনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত এলাকা’র বিধান অকার্যক... বিস্তারিত
মাহমুদুল হক আনসারী: নারী মানুষ নারী গৃহ থেকে রাষ্ট্র পর্যন্ত কর্মক্ষম একটি শক্তি। নরী একজন গর্ভধা... বিস্তারিত
নিউজগার্ডেন ডেস্ক: জনস্বাস্থ্য সবার উপরে। তামাক ব্যবহারজনিত মৃত্যু কমাতে শক্তিশালী আইন জরুরি বল... বিস্তারিত
নিউজগার্ডেন ডেস্ক: চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, এই সরকার একটি লুটপাট... বিস্তারিত
নিউজগার্ডেন ডেস্ক: কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ সভাপতি ও চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দ... বিস্তারিত
নিউজগার্ডেন ডেস্ক: রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুর... বিস্তারিত
নিউজগার্ডেন ডেস্ক: চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বীরমুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছ... বিস্তারিত