বৃহস্পতিবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ ০১:৪৯ পিএম
বান্দরবান প্রতিনিধি: বান্দরবানের রুমায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অধীনে অনাবাদী পতিত জমি ও বসত বাড়ির আঙ্গিনায় আবাদ করার জন্য সরকারের দেয়া বিভিন্ন প্রকল্প সঠিক ভাবে বাস্তবায়ন না করে প্রকল্পের অনুকূলে দেয়া অর্থ বরাদ্ধের সিংহভাগ টাকাই আত্মসাৎ হয়ে গেছে। তবে প্রকল্পের সবকিছুই ঠিক রাখা হয়েছে কেবলমাত্র কাগজে কলমে। এমনটাই অভিযোগ উঠেছে রুমার উপজেলা সাবেক কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সাবাব ফারহান ও উপজেলা কৃষি উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইউসুপ মিয়ার বিরুদ্ধে।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ২০২১ সালের ১৯জুন কৃষি মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বান্দরবানের রুমা পরির্দশন করেন। এসময় আর্ন্তজাতিক বাজারে চাহিদা
থাকায় পাহাড়ী অঞ্চলসহ দেশের সকল অনাবাদী পতিত জমি ও বসত বাড়ির আঙ্গিনাগুলোকে চাষাবাদের আওতায় আনতে চীনা বাদাম, ভুট্টা, বোরো প্রর্দশনী, আউশ প্রদর্শনী, আমন প্রর্দশনী, কাজু বাদাম ও কফি প্রদর্শনী, এস এম ই প্রদর্শনী, অনাবাদী জায়গায় সবজি পুষ্টি বাগান ও সাইট্রাস প্রদর্শনী, রাজস্ব ও এডাবশন, মাঠ দিবস ও কফি কাজু বাদাম প্রশিক্ষণার্থীর প্রশিক্ষণসহ বেশ কয়েকটি প্রকল্পের উপর গুরুত্ব দিয়ে ২১১কোটি টাকা বরাদ্ধ দেয় সরকার। প্রকল্পের কাজ শুরু করতে বান্দরবানের রুমাতেও এসব প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্ধ দেয়া হয় কয়েক কোটি টাকা। তবে দূর্গম পাহাড়ী এলাকায় যাতায়াত সমস্যা, নেটওয়ার্ক না থাকা ও সঠিক তদারকি করতে না পারার সুযোগকে কাজে লাগিয়েছেন এদুজন। যোগাযোগ সহজ এমন কিছু স্থানে প্রকল্পের কাজ ঠিক রেখে অধিকাংশ স্থানে প্রকল্পের বরাদ্ধের ৯০শতাংশ টাকাই আত্মসাৎ করেছে। আর আত্মসাৎ করা কয়েক কোটি টাকা ইতিমধ্যে রুমা সোনালী ব্যাংক থেকে এ দুই কর্মকর্তা বিভিন্ন নিকট আত্মীয়ের একাউন্টে পাঠিয়ে দিয়েছে, যা তদন্ত করলে সত্যতা মিলবে।বান্দরবান রুমার কৃষকেরা বলেন, সরকার কাজু বাদাম ও কফি, সবজি পুষ্টি বাগানসহ বিভিন্ন প্রকল্পে কি বরাদ্ধ দিয়েছে আমরা জানিনা। তবে আমরা যা পেয়েছি তা বাগান করার জন্য পর্যাপ্ত না। চাষের জন্য স্বল্প পরিমানে সার পেয়েছি এটি দিয়েও চাষাবাদ সম্ভব না। তাই আমরা নিজেরাও অনেক সময় বাজার থেকে সার কিনে এনেছি। এসময় তারা উগ্র স্বরে বলেন, সরকারের উচিত ছিল বরাদ্ধের পরিমান বাড়ানো। না হলে আমাদেরমত দরিদ্র কৃষকের পক্ষে এত অল্প পরিমান সুযোগ সুবিধা দিয়ে কখনোই এ প্রকল্পগুলোকে আলোর মুখ দেখানো সম্ভব না। সরকারে দেয়া সকল বরাদ্ধ ঠিকমত বিতরণ করা হয়েছে কিনা তারও সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান পাহাড়ের সহজ সরল কৃষকেরা।
এদিকে রুমা কৃষি অফিস ও সোনালী ব্যাংকের কয়েকজন জানান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাবাব ফারহান ও উপজেলা কৃষি উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ ইউসুপ মিয়া ২০২১সালের প্রকল্পের নামে বরাদ্ধের পর থেকে কয়েক দফায় সোনালী ব্যাংক থেকে কয়েক কোটি টাকা নিজের, স্ত্রী এবং নিকট আত্মীয়ের একাউন্টে স্থানান্তর করেছে। এসময় তারা এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি জানান।
এদিকে নাম না প্রকাশ করার শর্তে কৃষি অফিসের কয়েকজন জানান, তিনি প্রকল্প আসার পর থেকে দফায় দফায় কুড়িগ্রামের বাড়িতে মোটা টাকা অংকের পাঠিয়েছেন। নিজের, স্ত্রী এবং স্বজনদের একাউন্টের স্টেটমেন্ট নিলে এর প্রমান পাওয়া যাবে। এছাড়া সর্বশেষ তিনমাসে ৭৪বার বিমানে আসা যাওয়া করেছেন বলেও অভিযোগ করেন তারা।
বান্দরবানের মোঃ হাফেজ, সেলিমসহ কয়েকজন জানান, রুমা উপজেলা কৃষি উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইউসুপ মিয়া চাকরী জীবনের বেশিরভাগ সময়ই পার করেছেন বান্দরবানে। এখানেই উপসহকারী কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা থেকে পদোন্নতি হয়ে হয়েছেন উপজেলা কৃষি উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা। আর বান্দরবানেই নামে বেনামে গড়েছেন কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি। গোপন চুক্তির মাধ্যমে অংশীদারদের সাথে করছেন কয়েক কোটি টাকার ব্যবসা। তবে এসব থেকে সবার নজর এড়াতে বালাঘাটার একটি ভাড়া বাসায় থাকেন তিনি। গভীর তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তিসহ সকল রহস্যে। তারা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করতে দুদকেরও হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এদিকে রুমার পাইন্দু ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উহ্লামং মারমা মুঠোফোনে জানান, তার এলাকার কৃষকদের কি কি দেয়া হয়েছে তিনি তা জানেননা। কতজন কৃষক ও প্রতিকৃষকের জন্য কি বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে তাও তিনি জানেননা। এসময় তিনি বলেন, অবশ্যই একজন চেয়ারম্যান হিসেবে আমাকে বিষয়গুলো জানানোর দরকার ছিল, কিন্তু জানাননি। তিনিও এসব প্রকল্পের বিষয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম ও প্রকল্পের টাকা লোপাটের কথা অস্বীকার করেছেন রুমার উপজেলা সাবেক কৃষি কর্মকর্তা সাবাব ফারহান ও উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ ইউসুপ। তারা প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের বিষয়টিও অস্বীকার করেছেন।
এবিষয়ে সাবেক রুমা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাবাব ফারহান বলেন, আমি যদি কোন ধরণের অনিয়ম করতাম তাহলে আমাকে অফিস ছাড়পত্র দিল কিভাবে? প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগগুলো মিথ্যা ও বানোয়াট বলেও দাবি করেন তিনি।
অপরদিকে উপজেলা কৃষি উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইউসুপ মিয়া জানান, যেসব অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে তা সাবেক উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাবাব ফারহানের স্বাক্ষরে হয়েছে। আমার স্বাক্ষরে কোন কিছু হয়নি। আর অনিয়ম করার কোন সুযোগও আমার নেই।
তবে অনিয়মের বিষয়গুলো তদন্ত করে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন রুমার সদ্য যোগদান করা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাহিদুল ইসলাম নাহিদ, তিনি বলেন, আমি মাত্র নতুন যোগদান করেছি। যোগদানের পর আগের কর্মকর্তা সাবাব ফারহান ও ইউসুপের বিষয়ে অনেক অভিযোগ শুনেছি। বিষয়গুলো তদন্ত করে সত্যতা পেলে অফিসিয়ালি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে আমার কাছে কোন অভিযোগ আসেনি। কেউ লিখিত অভিযোগ করলে অবশ্যই তদন্ত করে ব্যবস্থা নিব।
সাবস্ক্রাইব ইউটিউব চ্যানেল
লাইক ফেইসবুক পেইজ
নিউজগার্ডেন ডেস্ক: সাংবাদিক, মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠক এবং চট্টগ্রাম রিপোর্টার্স ইউনিটি (সিআ... বিস্তারিত
নিউজগার্ডেন ডেস্ক: বিপ্লবী নেতা তারকেশ্বর দস্তিদার’র গ্রামের বাড়ি বোয়ালখালী উপজেলা ৫নং সারোয়া... বিস্তারিত
নিউজগার্ডেন ডেস্ক: চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির প্রাক্তন সদস্য বিশিষ্ট আইনজীবী এডভোকেট মুহম্ম... বিস্তারিত
নাজিম উদ্দীন চৌধুরী, ফটিকছড়ি: চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফে ১০ মাঘের ওরশে লাখো ... বিস্তারিত
অভিনন্দন নতুন দিন বছরের শুভেচ্ছা পুর্ণ হোক ধন্য হোক সকলের সদিচ্ছা, বাইশ গেল তেইশ এলো আসা যাওয়া... বিস্তারিত
নিউজগার্ডেন ডেস্ক: জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হলেন নিউজগার্ডেন’র প্রধান উপদেষ্টা, জাতীয় ... বিস্তারিত
নিউজগার্ডেন ডেস্ক: চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ইয়াছিন চৌধুরী লিটন বলেছেন, বর্তমান সরকা... বিস্তারিত
নিউজগার্ডেন ডেস্ক: চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, বর্তমান অবৈধ সরকার ল... বিস্তারিত
নিউজগার্ডেন ডেস্ক: বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয়কারী মা... বিস্তারিত
নিউজগার্ডেন ডেস্ক: চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, এই সরকার বাংলাদেশকে ... বিস্তারিত