নিউজগার্ডেন ডেস্ক: মানব দেহের চোখ হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংবেদনশীল ও ভীষণ অনুভূতিসম্পন্ন একটি অঙ্গ। চোখের বিভিন্ন সমস্যা ও অসুখ বিসুখ হয়। এর মধ্যে ছানিপড়া রোগ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। চোখে ছানিপড়া বয়স্কদের একটি রোগ। তবে সব বয়স্কদের নয়। বেশকিছু বয়স্ক নারী-পুরুষ আছে যাদের ৪০-৫০ বছর বয়স থেকেই সাধারণত চোখের মণির উপরে এক ধরনের আবরণ পড়া শুরু করে এবং দৃষ্টি অস্বচ্ছ হতে থাকে। এটাকেই ছানি রোগ বলা হয়। কারো এক চোখে পড়ে, কারো দুই চোখেই পড়ে- একসাথে আবার কারো পর্যায়ক্রমে দুই চোখেই ছানি পড়ে। একসময় দৃষ্টিশক্তি
হারায়। ছানিজনিত কারণে দৃষ্টিশক্তি হারালে অস্ত্রপোচারের মাধ্যমে ছানি অপসারণ করে একটি লেন্স পরিয়ে দেয়া হয়। চোখের জন্য এটি বড় অপারেশন হলেও অপারেশনের ৬ ঘণ্টা পরে রোগীকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। তখন পূর্বের মতই দৃষ্টি ফিরে পায়।
২ হাজার জন ছানী রোগীর সফলভাবে ছানী অপারেশন সম্পন্নকরণ উপলক্ষে আজ ২ ডিসেম্বর (শুক্রবার) শেভরণ আই হসপিটাল এন্ড রিসার্স সেন্টারে চন্দনাইশ সমিতি-চট্টগ্রাম’র এই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদুর রহমান। লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, ২০০৫ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত কাজগুলো সফলভাবে সম্পাদন করেছি- ২ হাজার জন ছানী রোগীর বিনামূল্যে ছানি অপারেশন। ৩০ হাজার জন চক্ষু রোগীর চিকিৎসার পাশাপাশি বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ। চন্দনাইশের বিভিন্ন জায়গায় স্বাস্থ্য ক্যাম্প পরিচালনা, সহস্রাধিক ছেলের খতনা ও সহস্রাধিক মেয়ের কর্ণ ছেদন সফলভাবে সম্পাদন। আট শতাধিক শিক্ষার্থীকে শিক্ষা জীবন শেষ না হওয়া পর্যন্ত ধারাবাহিক বৃত্তি প্রদান। জুনিয়র লেভেলে শিক্ষার্থীদের নগদ সহায়তা প্রদান। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা উপকরণ প্রদান, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ইংরেজি ও গণিত বিষয়ের শিক্ষকদের অধিকতর দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞ শিক্ষকমন্ডলী দ্বারা দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ প্রদান। চট্টগ্রাম শহরে বসবাসরত চন্দনাইশবাসীকে একটি অভিন্ন প্লাটফরমে একত্রিত করার জন্য চন্দনাইশ তথা চট্টগ্রাম শহরের সবচেয়ে বড় আয়োজন চন্দনাইশ সমিতির মিলনমেলা যা চন্দনাইশবাসীর মিলনমেলা নামে সর্বমহলে সমাদৃত ও সুপরিচিত। আমরা এখন পর্যন্ত মোট পাঁচটি মিলনমেলার আয়োজন করা হয়। গুণীজনদের কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ সম্মাননা প্রদান। সবুজ বনানায়নের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় লক্ষাধিক গাছের চারা বিতরণ। বন্যাকালীন সময়ে বন্যার্ত ও অসহায় দের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ, গৃহস্থালি সামগ্রী ও নগদ সহায়তা প্রদান। শিক্ষিত বেকার ছেলেমেয়েদের বিভিন্ন জায়গায় চাকুরী প্রাপ্তিতে সহযোগিতা। প্রতি বছর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের জন্য চন্দনাইশ থেকে ফ্রি বাস সার্ভিসে সহায়তা প্রদান। প্রতি বছর মাহে রমজানে চন্দনাইশবাসীদের নিয়ে ইফতার মাহফিল আয়োজন। এখন পর্যন্ত মোট ১৬ টি ইফতার মাহফিল সফলভাবে সম্পন্ন, প্রতি ইফতার মাহফিলে ৩০০০ জন মানুষের সমাগম হয়। বিগত করোনাকালীন মহামারিতে চন্দনাইশের ৫০০০ অসহায় পরিবারের নিকট খাদ্য সামগ্রী বিতরণ, জনগণ, প্রশাসন, মেডিকেল, মসজি মন্দিরে সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ এবং কোভিড টেস্টের ব্যবস্থা। প্রতিবছর জমকালো আনন্দ ভ্রমণের আয়েজন। চন্দনাইশের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় শিক্ষা সামগ্রীর পাশাপাশি বিভিন্ন আসবাবপত্র বিতরণ । বিভিন্ন সময়ে চন্দনাইশের বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সহযোগিতায় স্বপ্নবিলাস বিদ্যানিকেতন, চন্দনাইশ এর আয়োজনে এখন পর্যন্ত দুইবার আমাদের পৃষ্ঠপোষকতায় গণিত অলিম্পিয়াডের আয়োজন, যেখানে হাজার হাজার স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। বিভিন্ন সময়ে চন্দনাইশের প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে ঋণ বিতরণ। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ইংরেজি ও গণিত বিষয়ের শিক্ষকদের অধিকতর দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞ শিক্ষকমন্ডলী দ্বারা দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ প্রদান। ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনার মধ্যে চন্দনাইশের গরীব অসহায়দের চিকিৎসার্থে একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা আমাদেরকে দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন যা ইনশাআল্লাহ নিকট ভবিষ্যতে আলোর মুখ দেখবে। চন্দনাইশের বেকারত্বের সমস্যা দূরীকরণে একটি জব ফেয়ার এর আয়োজন করতে যাচ্ছি যা চন্দনাইশ কেরিয়ার কার্নিভাল নামে পরিচালিত হবে এবং এর মাধ্যমে চাকুরীদাতা ব্যক্তি/ প্রতিষ্ঠানের সাথে চাকুরী সন্ধানীদের মাঝে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করবে।
লিখিত বক্তব্যে মাকসুদুর রহমান আরো জানান, যাদের আর্থিক সহযোগিতায় মহতী উদ্যোগগুলো সফলভাবে সম্পাদন হয়েছে তাদের নিকট চন্দনাইশ সমিতি - চট্টগ্রাম বিশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি: পাহাড়তলী চক্ষু হাসপাতাল, শেভরন আই হসপিটাল এন্ড রিসার্চ সেন্টার, আবদুল কৈসুম চৌধুরী, সাবেক সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান, ট্রাষ্টি বোর্ড, ডাঃ শাহাদাত হোসেন, প্রধান উপদেষ্টা ও প্রতিষ্ঠা সভাপতি, আবু তাহের চৌধুরী, সভাপতি, মোঃ মাকসুদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক, মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, ট্রাষ্ট সেক্রেটারি, আব্দুল মান্নান, সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুল নবী খান, ভাইস চেয়ারম্যান, ট্রাষ্টি বোডর্, আব্দুর রহিম, সহ-সভাপতি জামাল উদ্দিন, সহ-সভাপতি আফনান ইসলাম, কার্যকরী সদস্য এডভোকেট বদিউল আলম ও জেবুন্নেছা বেগম ট্রাষ্ট, আবু ফয়েজ, ট্রাষ্টি সদস্য আব্দুল আলিম, যুগ্ম সম্পাদক, কমর উদ্দিন সবুর, সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি, মোঃ তৌহিদুল আলম, সাবেক সহ সভাপতি, মোঃ হামিদুর রহমান, জানিপপ-মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, সাবেক সহ সভাপতি মোঃ আনোয়ার হোসেন, সাবেক কার্যকরী সদস্য ও বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ।
লিখিত বক্তব্যে মাকসুদুর রহমান জানান, আমাদের এখন পর্যন্ত গৃহীত প্রোগ্রাম বাবাদ মোট ব্যয় ১১ কোটির কাছাকাছি খরচ হয় যার মধ্যে ৯৫% আমাদের সমিতির সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের অর্থায়নে সফলভাবে সম্পন্ন হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চন্দনাইশ সমিতি চট্টগ্রাম’র সভাপতি আবু তাহের চৌধুরী, উপদেষ্টা প্রধানঃ ডাঃ শাহাদাৎ হোসেন , ট্রাস্টি চেয়ারম্যানঃ আবদুল কৈয়ুম চৌধুরী, অধ্যাপক আজম খান, আবু ফয়েজ, চক্ষু ছানি অপারেশন উপকমিটির আহবায়ক এডভোকেট মোঃ নজরুল ইসলাম, সদস্য সচিব আবু সাঈদ মুন্না, সদস্যঃ ইদ্রিস, আ ন ম হাসান চৌধুরী, সাদ, ফারুক, শওকত, নেজাম। আরো উপস্থিতছিলেন কমিটির কর্মকর্তা জামসেদ চৌধুরী, অধ্যাপক ইয়াকুব নবী, মলকুতুর মনীর, রুমেল, সাইফুদ্দিন, পূরবী দাশ, আবু তাহের ও নেজামসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।