নিউজগার্ডেন ডেস্ক: চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আদালতের আইন মানছে না বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছেন চট্টগ্রাম বন্দর মেরিন কন্ট্রাক্টর পাহারাদার কল্যাণ সমিতি। আজ ২৬ জুন (রবিবার) সকাল ১১ টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে চট্টগ্রাম বন্দর মেরিন কন্ট্রাক্টর পাহারাদার কল্যাণ সমিতির সভাপতি মনোয়ার আলী রানা লিখিত বক্তব্যে এ অভিযোগ করেন।
তিনি আরো জানান, সংবাদ সম্মেলনে উচ্চ আদালতে মামলা থাকা সত্ত্বেও চট্টগ্রাম বন্দরে কিছু অসাধু কর্মকর্তা অর্থের বিনিময়ে অবৈধভাবে সর্বোচ্চ আদালতের রায়কে তোয়াক্কা না করে ওয়াচম্যান নিয়োগের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে শ্রম অসন্তোষের দিকে ঠেলে দিচ্ছে তাই চট্টগ্রাম বন্দর মেরিন
কন্ট্রাক্টর পাহারাদার কল্যাণ সমিতি এ অবৈধ নিয়োগের বিরুদ্ধে দুর্বার গণ আন্দোলনের হুশিয়ারী দেন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এবং জনসচেতনতা ও বন্দর সংশ্লিষ্ট দপ্তর সমূহের মাধ্যমে স্মারকলিপি থেকে শুরু করে সার্বিক গণ আন্দোলনের দিকে এগিয়ে যাবে।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি মনোয়ার আলী রানা, সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন, সহসভাপতি নিজাম উদ্দিন, সহসভাপতি মো. সেলিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শাহ জামাল, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মো. গিয়াস উদ্দিন, দপ্তর সম্পাদক খায়রুজ্জামান বাবু, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মো. আলী হোসেন মোল্লা, ক্রীড়া সম্পাদক আলী আকবর, নির্বাহী সদস্য মুজিবুল হক ও রতন কুমার সিংহ প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরো জানান, এ চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক উচ্চ আদালতের রায়কে বারবার কার্যকর না করে চট্টগ্রাম বন্দরে দেশী-বিদেশী জাহাজেরওয়াচম্যান/ পাহারাদারঅবৈধভাবে নিয়োগ দানের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরের কিছু কতিপয় উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বে-আইনিভাবে অর্থ বাণিজ্য করতে গিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়কে অবমাননা করছে। বন্দরের ভাবমূর্তি বিনষ্টের চেষ্টা ও সর্বোচ্চ আদালতের আইনকে পদদলিত করার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে জরুরীভাবে আয়োজিত আজকের এই সংবাদ সম্মেলনে জানান।
লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, এ একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম বন্দরে আগত দেশী-বিদেশী জাহাজে ওয়াচম্যান নিয়োগকে কেন্দ্র করে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে আমরা এই জরুরী সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করি স্বল্পতম সময়ে আপনাদের কষ্ট দেওয়ার জন্য প্রথমে দুঃখ প্রকাশ করছি। সাথে সাথে সারাদেশের মানুষ মনে করে সমাজের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে গরীব নিরীহ অসহায় মানুষ যখন অধিকার বঞ্চিত হয় তখন গণমাধ্যমের কাছে যাওয়াই তাদের শেষ ভরসা। আমরাও এমন পরিস্থিতিতে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরো জানান, আপনাদের মাধ্যমে সদয় অবগতি এবং দেশবাসী ও সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য জানাচ্ছি যে, চট্টগ্রাম বন্দর জন্মলগ্ন থেকে প্রাইভেট ঠিকাদারের মাধ্যমে ওয়াচম্যান/ পাহারাদার, ডক শ্রমিক, মার্চেন্ট শ্রমিক, লাইশিং আনলাইশিং শ্রমিক, ক্রেন অপারেটর, স্টাফসুপার ভাইজার, ফোরম্যান, মার্কম্যান, জেনারেল ভেন্ডর শ্রমিক, এষ্ট্রা হাউস গ্যাং নিয়োগ দান করিয়া আসতেছে। যাহা বর্তমানেও চলমান আছে। কিন্তুু বর্তমানে বন্দর কর্তৃপক্ষের কিছু অসাধু কর্মকর্তা দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় অমান্য করে শুধুমাত্র নিজেদের হীনস্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে আমাদের বৈধ সংগঠনের সদস্য ওয়াচম্যান/ পাহারাদার নিয়োগে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতেছে। আপনারা জানেন, চট্টগ্রাম বন্দরে ওয়াচম্যান নিয়োগকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বন্দর মেরিন কন্ট্রাক্টর পাহারাদার কল্যাণ সমিতি রেজি: নম্বর: চট্ট-২৬৩৭, পিসি রোড, নিমতলা, বন্দর, চট্টগ্রাম; এর সাথে ২০০৮ সাল থেকে মহামান্য হাইকোর্টে রিট পিটিশন মামলা দাখিল করে অত্র কল্যাণ সমিতি সাং- তারিখ ০৭/১১/২০০৮ যার নম্বর ৮৫৩১/২০০৮, এর পর থেকে শুরু হয়ে যায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ওয়াচম্যানদের উপর অত্যাচার, নির্যাতন, মাননীয় হাইকোর্ট অত্র কল্যাণ সমিতির পক্ষে ঐতিহাসিক রায় প্রদান করেন। ২৪/১১/২০০৯ইং তারিখ সে সময় তৎকালীন মেয়র আলহাজ্ব এ.বি.এম মহিউদ্দিন চৌধুরী হাইকোর্টের রায় কার্যকর করার জন্য একটি ডি.ইউ লেটার প্রদানকরেন মাননীয় চেয়ারম্যান মহোদয়কে। মাননীয় চেয়ারম্যান মহোদয় বলেন, আমরা এ বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টে আপীল করেছি।যার স্মারক মামলা নম্বর: ২২৬/২০১০, আপীল চলাকালীন অবস্থায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ অবৈধ অর্থ লেনদেন করে ও উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করে কিছু লোক নিয়োগ করে। যার প্রতিবেদন তখনকার পত্র-পত্রিকায় লিখা আছে। বন্দর কর্তৃপক্ষের করা উচ্চ আদালতের মাননীয় সুপ্রিমকোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানী হয়ে আপীল খারিজ করে। মাননীয় হাইকোর্টের রায় কল্যাণ সমিতির পক্ষে বহাল রাখেন। যার তারিখ: ১৬/০২/২০১২ইং অত্র রায়ের পরে শুরু হয় বন্দর কর্তৃপক্ষের রায় কার্য্যকর না করার তালবাহানা। আবারো তৎকালীন মহানগর আওয়ামিলীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র আলহাজ্ব এ.বি.এম মহিউদ্দিন চৌধুরীমাননীয় বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে চিঠি দেয়। চেয়ারম্যান পাল্টা চিঠি দিয়ে জানান, মহামান্য সুপ্রিমকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করা হয়েছে।যার মামলানম্বর: ৫৬/২০১২ তারিখ: ২৬/০৫/২০১৬ইং। তাও রায় কার্য্যকরের সময়সীমা পার হওয়ার পরকর্তৃপক্ষ রায় কার্য্যকর না করায় আমরাচট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানসহ ৬ (ছয়) জনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননা মামলা দায়ের করি।যার রিটপিটিশন নম্বর: ৩০৯/২০১২তারিখ: ১৬/১০/২০১২ইং দাখিল করিলে মাননীয় হাইকোর্টের বেঞ্চে ৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রুল নিশি জারি করেন। যা এখনও চলমান আছে। সেসময় গরীব-মেহনতি মানুষের পরম বন্ধু আলহাজ্ব এ.বি.এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে মানব বন্ধন ও প্রতিবাদ সভা-সেমিনার ও অনশন ধর্মঘট পালন করিলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আমাদের সাথে বৈঠক করে তৎকালীন চেয়ারম্যান মহোদয়ের সাথে সফল আলোচনার পর একটি তিনশত টাকার স্ট্যাম্প-এ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়, তারিখ: ১৯/১০/২০১৪ইং। অদ্যাবধি পর্যন্ত চুক্তি মোতাবেক চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ কোন কাজ বাস্তবায়ন করেনি। এর পর আমাদের শ্রদ্ধেয় নেতা আলহাজ্ব এ.বি.এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ইন্তেকাল করেন। এর পর ফাইলটি একেবারেই বন্ধ রাখেন বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর আগে রিভিউ মামলায় পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানী শেষে মহামান্য আদালত বন্দরের করা রিভিউ আবেদন খারিজ করে দিয়ে উচ্চ আদালতে রায় বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন। এর মধ্যে আদালত অবমাননা মামলার দোহাই দিয়ে উচ্চ আদালতের রায়কে না মেনে বন্দর কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ আদালতের রায়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েআবারো অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে বহিরাগত অদক্ষ ওয়াচম্যান/ পাহারাদার নিয়োগ দেওয়ার নামে অর্থ বাণিজ্য করছে এবং নিজেদের স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে দেশে সর্বোচ্চ আদালতের রায়কে বারবার অবমাননা করে তাদের হীন-স্বার্থ হাসিল করার উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে অদক্ষ ওয়াচম্যান/ পাহারাদার নিয়োগ করে দেশে-বিদেশে চট্টগ্রাম বন্দরের সম্মান ক্ষুন্ন করিতেছে। ফলশ্রুতিতে দক্ষ ওয়াচম্যান/ পাহারাদারগণ বহুদিন যাবৎ অনাহারে-অর্ধাহারে মানবেতর জীবন-যাপন করিতেছে। এই ব্যাপারে আমরা বঙ্গবন্ধু কন্যা গণতন্ত্রের মানষকণ্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি এবং হস্তক্ষেপ কামনা করছি।