সাফাত বিন ছানাউল্লাহ্: জীবনের প্রয়োজনে যেটাই করিনা কেন সবটুকু হোক মানুষের কল্যাণে। সমাজ বিনির্মানে অন্তরায় নিরন্তর প্রচেষ্টা। পরিবর্তন আশা করলে ঝাপিয়ে পড়তে হবে যেকোনো প্রকারে। চেয়ে দেখার সুযোগ আর নেই! সময় দ্রুত গড়ানোর পাশাপাশি বয়সে ছাপ পড়ছে। যতো দিনগুলো অতিবাহিত হচ্ছে কঠিন থেকে কঠিন করে ফেলছে বাস্তবতাকে। কিছু একটার দোহাই দিয়ে ঘরে বসিয়ে রাখার স্পর্ধা দেখানোর লোকজন ধীরে ধীরে কমছে চারপাশে। একসময় মেয়েদের পড়ালেখা তো দূরে ঘর থেকে বের হওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ ছিলো। ঘরে বসিয়ে রাখা হতো পরের ঘরে উনুন জ্বালাতে হবে তাই। সেখানে আজ

নারীদের পদচারণা সর্বত্র। সমাজ-রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করার দৃঢ় সংকল্প নিয়ে ওরা অঙ্গীকারবদ্ধ। আজও অনেক সময় এমন দেখা যায় মেয়েরা যখন সফল কাজ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চক্ষুশূল হয় একপক্ষের। পুরুষের পাশাপাশি কেন মাঠে থাকবে? মানতেই পারেনা ওরা। শৃংখলাবদ্ধ থেকে ওরা যে এসেছে কাজ করার মানসে, এটাই বড় কথা। বর্তমানে নারীদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করবার এত বেশি আকাঙ্খা রয়েছে বলবার মতো নয়। এইটা আমাদের জন্য মঙ্গলের। যদি যথাযথ সুযোগ পায় পুরো ব্যবস্থাটাই পাল্টে দিতে সক্ষম নারীরা। অনুপ্রেরণা দিতে হবে মেয়েদের এখনকার দিনে আরও বেশি করে। তবেই ওরা সমাজের উন্নতি করার স্পৃহা পাবে। গুণীজনরা লেখনীতে বলে গেছেন নারীর অপর নাম ঈশ্বরী। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম কত সুন্দর কবিতায় বলেছেন -
"বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর "
অন্য কবিতায় বলেছেন -
“ কোনকালে একা হয়নিকো জয়ী পূরুষের তরবারী;
প্রেরনা দিয়াছে,শক্তি দিয়াছে,বিজয়ালক্ষী নারী ”
আরো অনেক বিখ্যাত নারীদের নিয়ে লিখেছেন। একজন পুরুষ কখনো সঙ্গী ছাড়া পূর্ণতা পায় না। যদি একটি স্বাধীন দেশের উদাহরণ দেয়া যায়, তবে আমাদের বাঙালি জাতির মহানায়ক, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব না হলে টুঙ্গিপাড়ার খোকা থেকে বঙ্গবন্ধু, জাতির পিতার আজীবন নিরলস সংগ্রাম এতটা পূর্ণতা পেত না। ইতিহাস বলে যুগ যুগ ধরে সাহিত্য-সংস্কৃতিতে নারীদের অবদান কতোটুকু! আমাদের মহান ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধে নারী যোদ্ধাদের অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে আজীবন। যদি ধর্মের দিক দিয়ে বিবেচনা করা যায় মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর জীবনে আম্মাজান মা খাদিজাতুল কুবরা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা থেকে শুরু করে স্ত্রীদের অবদান অনস্বীকার্য। এমনকি ধর্ম গ্রন্থ সংরক্ষণ এবং সংকলনে নারীদের অবদান রয়েছে। নবী যুগের অসংখ্য যুদ্ধে নারীদের অংশগ্রহণ ছিলো দেখার মতো। বীরত্বের পরিচয় দিয়ে ওরাও ভূমিকা রেখেছে ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এই গল্প অত্যন্ত গর্বের সাথে বুক ফুলিয়ে আমরা বলে থাকি। কিন্তু একজন মেয়ে বাইক চালিয়ে যখন রাস্তা দিয়ে যায় আঁড়চোখে তাকাই ভিনগ্রহ থেকে কোন এলিয়েন আসছে এমন করে! পর্দার দোহাই দিয়ে ধার্মিক হওয়ার চেষ্টায় তখন ফতোয়াবাজি করি। এতোই যদি নিজেকে গণ্ডির মাঝে আবদ্ধ করতে ইচ্ছুক তবে চোখ দু’টি বেপর্দা ওই মেয়ের দিকে কেন? ধর্মের দোহাই দিয়ে আটকে রাখা মানে মূলত ধর্মের বিপরীতে অবস্থান। আমাদের উচিত প্রতিটি ক্ষেত্রে মেয়েদের প্রাধান্য দেয়া, সুশিক্ষিত করে তোলা। এতেই হবে সমাজ/ রাষ্ট্রের সঠিক উন্নয়ন। লেখক: কবি,প্রাবন্ধিক, সংগঠক, সদস্য: মুক্তধ্বনি আবৃত্তি সংসদ