শুক্রবার, ২০ মে ২০২২ ০৩:১৫ এএম
নিউজগার্ডেন ডেস্ক: তোড়জোড় চলে বেশ। চলে কর্তা ব্যক্তিদের প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি। দেখে মনে হয়, এরপর থেকে আর রেহাই পাবে না কিশোর বখাটের দল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, পরিকল্পনা আর বাস্তবায়িত হয় না। বখাটেদের আড্ডাও চলতে থাকে স্কুল কলেজ কোচিং সেন্টারের সামনে, কখনো আবার পাড়ায় পাড়ায়, গলি উপগলি ও চেরাগীর আজাদী গলি। অতি আত্মবিশ্বাস তাদের প্রায়শই বিপদে ফেলে; যার খেসারত দিতে হয় সে সহ গোটা পরিবারকে।
পিবিআই প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার দীর্ঘদিন এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করেছেন। কিশোর অপরাধীদের সঙ্গে কথা বলে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে
তিনি জানিয়েছেন, কিশোররা বাস্তবে অপরাধবোধ হারাচ্ছে। কোন অপরাধের কী শাস্তি-এ সম্পর্কে এদের ধারণা নেই। অপরাধ ও অপরাধের শাস্তির বিষয়ে কিশোরদের ধারণা না থাকার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ছিনতাইয়ের ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত এক কিশোর পুলিশের প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছে, তার (কিশোর) চিন্তা জেল শাস্তি নয়, গ্রেপ্তারের পর দুশ্চিন্তা বেড়েছে বান্ধবীকে নিয়ে।কারণ গ্রেপ্তারের খবর শুনে বান্ধবী তাকে ছেড়ে চলে যেতে পারে! কিশোর অপরাধীরা চায় না তাদের অপরাধের বিষয়টি মা-বাবারা জানুক। অর্থাৎ অপরাধটি তারা না বুঝে করে ফেলে এবং পরে স্বজনদের জানতে দিতে চায় না। একমাত্র পারিবারিক অটুট বন্ধন পদ্ধতি কিশোর অপরাধ কমাতে পারে।
কিশোর অপরাধের কারণ তুলে ধরে বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. অনুপম সেন বলেন, সঙ্গদোষ কিশোর অপরাধের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। আমরা যাদের সঙ্গে চলাফেরা করি তাদের একটা প্রভাব সবসময় আমাদের মধ্যে থাকে। এখন কোনো কিশোর যখন খারাপ মানুষের সঙ্গে মিশে তখন সঙ্গদোষের কারণে সে অপরাধীতে পরিণত হতে পারে। কিশোর মনের কৌতুহলকে পুজি করে তাদের অন্ধকার পথে টেনে নিয়ে যাওয়ার নেপথ্যের কারিগর ‘বড় ভাই’দের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সচেষ্ট হতে হবে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, জামালখান, হেমসেন লেইন, মোমিন রোড, চেরাগীর মোড়, আন্দরকিল্লা, রাজা পুকুর লেইন, রহমতগঞ্জ কেন্দ্রিক সক্রিয় রয়েছে কিশোরদের দুটি গ্রুপ। এর মধ্যে একটি হল ‘ফাইভ স্টার’, অন্যটি ‘সাব্বির সেনা’। ফাইভ স্টার গ্রুপের সদস্যদের হাতেই গত ২২ এপ্রিল খুন হয় সাব্বির সেনা গ্রুপের আসকার ওরফে ইভান। শনিবার (২৩ এপ্রিল) ইভানের বাবা এস এম তারেক বাদি হয়ে ফাইভ স্টার গ্রুপের ধ্রুব, প্রান্ত, শ্রাবণ, শচীন, রুবেল দত্ত, অর্ক এবং মহান চৌধুরীর নাম উল্লেখ করে এবং ১২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর পুলিশ ওই গ্রুপের শোভন দেব নামে এক কিশোরকে গ্রেপ্তার করেছে। এই গ্রুপের প্রধান সদস্য শৈবাল দাশ ২০১৪ সালে আগ্রাবাদের জাম্বুরি মাঠে রাসেল হত্যা মামলার অন্যতম আসামি। এছাড়া ২০১৬ সালে জামালখান ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কাশেম বাবুলকে হেনস্তা ও হত্যা চেষ্টা মামলারও প্রধান আসামি সে।
অন্যদিকে ‘সাব্বির সেনা’র বিচরণ জামালখান-চেরাগীর মোড়-মোমিন রোড-রহমতগঞ্জ-জেএমসেন লেইন-দেওয়ানজী পুকুর পাড়-মাছুয়া ঝরনা এলাকায়। কথিত ছাত্রলীগ নেতা সাব্বির সাদিকের নেতৃত্বে পরিচালিত হওয়া গ্রুপটির প্রধান সদস্যদের মধ্যে রয়েছে মো. শাহজাহান, অমিত, নাবিয়ান, আসকার এবং জুবায়ের সাহানুর। এদের মধ্যে অমিত ঘটনার দিন নিহত আসকারকে ফোন করে ডেকে আনে। গ্রুপের নিয়ন্ত্রক সাব্বির সাদিকের বিরুদ্ধে রয়েছে অস্ত্র মামলাও। ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম কলেজে গিয়ে অস্ত্র হাতে শোডাউন দেন তিনি। ঘটনার একদিন পর আন্দরকিল্লা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। বায়েজিদ এলাকায় এ ধরনের একটি গ্রুপের সন্ধান পাওয়া গেছে। ‘টেনশন গ্রুপ’ নামে পরিচিত এ গ্রুপের নয় সদস্যকে র্যাব গত সোমবার রাত ১১টার দিকে গ্রেপ্তার করে।
শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) রাতে হালিশহরে ঈদ বস্ত্রমেলায় সামান্য ধাক্কাধাক্কির জেরে নগরীর পাহাড়তলী থানার ঈদগাঁ কাঁচা রাস্তার মোড়ে দুই দল কিশোরের মধ্যে প্রথমে ঝগড়া ও পরে মারামারি হয়। এ সময় ছুরিকাঘাতে আহত হয় দুই কিশোর। এদের মধ্যে ফাহিম (১৬) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায়। ইমন নামে আহত অপর কিশোর এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। নিহত ফাহিম গণপূর্ত বিদ্যা নিকেতনের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সোমবার (১৮ এপ্রিল) রাতে কিশোরগঞ্জ নিকলী থানা এলাকা থেকে ১৪ বছর বয়সী সজলকে গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রামে আনা হয়, যে ঘটনায় ফাহিমকে ছুরিকাঘাত করেছিল।
এভাবে নগর জুড়ে বিভিন্ন নামে অন্তত অর্ধশতাধিক কিশোর গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। যেমন ইতোপূর্বে নগরীতে আদনান ইসফার খুনের সাথে জড়িত কিশোর গ্যাংয়ের নাম ছিল ‘বিগ বস’। তাসফিয়ার মৃত্যুর পেছনে জড়িত গ্যাংয়ের নাম ছিল ‘রিচ কিডস’। আরাফাত হত্যায় জড়িত কিশোর গ্যাংয়ের নাম ‘বডি বিল্ডার’।
গোয়েন্দারা বলছেন, নগরীর চকবাজার, মেডিকেল হোস্টেল, শিল্পকলা একাডেমি, সিআরবি, লালদীঘি, চেরাগী পাহাড়, আন্দরকিল্লা, খুলশী, ফয়’স লেক, ডেবার পাড়, চান্দগাঁও শমসেরপাড়া, ফরিদের পাড়া, আগ্রাবাদ সিজিএস কলোনি, সিডিএ, ছোটপুল, হালিশহর, বন্দর কলোনি ও পতেঙ্গার বেশ কয়েকটি এলাকায় মাদক বেচাকেনাসহ মোটরসাইকেল ও সাইকেল ছিনতাই, গান-বাজনা, খেলার মাঠ, ড্যান্স ও ডিজে পার্টি, ক্লাবের আড্ডাসহ বেশকিছু বিষয় নিয়ন্ত্রণে মরিয়া অর্ধশতাধিক কিশোর গ্যাং। এছাড়াও শাহ আমানত ব্রিজ, টোল রোড, এয়ারপোর্ট রোড, অক্সিজেন অনন্যা আবাসিক এলাকা, সিআরবি এলাকা, ফিরিঙ্গিবাজার থেকে মেরিনার্স রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় স্বল্প বয়সী তরুণদের গ্যাং বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।
সাবস্ক্রাইব ইউটিউব চ্যানেল
লাইক ফেইসবুক পেইজ
নিউজগার্ডেন ডেস্ক: বিশিষ্ট সাংবাদিক, কলামিস্ট, বুদ্ধিজীবী ও স্বাধীনতাপদক প্রাপ্ত লেখক আব্দুল গাফ... বিস্তারিত
নিউজগার্ডেন ডেস্ক: লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল জেলা ৩১৫-বি৪ এর ২৫তম বার্ষিক জেলা কনভেনশন উপলক্ষে... বিস্তারিত
নিউজগার্ডেন ডেস্ক: চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে আজ মঙ্গলবার সকালে নগরীতে মোবাইল কোর্ট পর... বিস্তারিত
নিউজগার্ডেন ডেস্ক: তথ্য প্রযুক্তিতে প্রতিবন্ধীদের সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। তারা সেখানে প্রবেশ করছে। ... বিস্তারিত
এম এম রাজামিয়া রাজু: গাড়ীওয়ালাদের ঈদের ঝাঁজ এখনো যায়নি। তাই যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ... বিস্তারিত
নিউজগার্ডেন ডেস্ক: পটিয়ায় জমির বিরোধকে কেন্দ্র করে মারামাররি করায় আবদুল হাকিম রানা ও মাহবুবুর রহ... বিস্তারিত
নিউজগার্ডেন ডেস্ক: বাঁশখালী আবদুল মাবুদ ফাউনেডশনের ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান চাঁদপুর কিউএইচআরডিইউ... বিস্তারিত
নিউজগার্ডেন ডেস্ক: বিদ্যমান ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫’-এ তামাকজাত... বিস্তারিত
নিউজগার্ডেন ডেস্ক: বিশিষ্ট সাংবাদিক, কলামিস্ট, বুদ্ধিজীবী ও স্বাধীনতাপদক প্রাপ্ত লেখক আব্দুল গাফ... বিস্তারিত
নিউজগার্ডেন ডেস্ক: দুই এমপি’র সম্মতি হিসেবে দুই এমপি’র সুপারিশসহ সুপরামর্শ বাস্তবায়ন করার জন... বিস্তারিত