কে. এম আলী হাসান: দেশের এই চরম ক্রান্তিলগ্নে চট্টগ্রামের বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা “আল-মানাহিল ওয়েল ফেয়ার ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ” এর পক্ষ থেকে জনকল্যাণ মূলক বিভিন্ন মানবিক কর্মসূচী গ্রহণ করেছেন। তাদের নানান উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে প্রথমে লকডাউনের কবলে পড়া এবং করোনা কালেও দরিদ্র জনগোষ্ঠীগুলোকে চাউল, ডাল, তেল, আলু, চিনি, চা পাতা, লবণ সহ প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়। ২০২১ সালে প্রায় ৭০ হাজার ফুড প্যাক অসহায় গরীবদেরকে সারাদেশে অন্নদান করেছে।
ইতিমধ্যে তারা প্রায় ষাট হাজার (৬০,০০০/-) পরিবারকে সাহায্যের হাত প্রসারিত করেছে। দ্বিতীয় কর্মসূচীর মধ্য রয়েছে প্রতি বছর
প্রথম রমজান থেকে শুরু করে শেষ রমজান অব্দি পর্যন্ত প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার গরীব, দুঃখী, ছিন্নমূল মধ্যবিত্ত সহ জন সাধারণের মধ্য প্রতিদিন রান্না করা প্যাকেট বিরানী বিতরণ করা হয়। করোনা কালে চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রায় ২৪টি ওয়ার্ডে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের এবং কমিশনারদের ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মাধ্যমে বন্টন করা হয় “ফুড ফর অল” সবার জন্য খাদ্য কর্মসূচীর আওতায় এই তৈরী করা খাবার বিতরণ করা হয়। তাছাড়া করোনায় অতি দরিদ্র জনগণকে সাধ্য অনুযায়ী সাহায্য করা হয়। বর্তমান সময়ে সবচেয়ে যে কর্মসূচী চট্টগ্রামের জনগণের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে তা হলো তাদের করোনা রোগীদের বিনামূল্যে সেবার কর্মসূচী। তম্মধ্যে রয়েছে বিশাল একটি স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী। এই স্বেচ্ছাসেবকরা রাত দিন পরিশ্রম করে যাচ্ছে মানবতার কল্যাণে। করোনা রোগীদের তাদের বাসা থেকে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া এবং হাসপাতাল থেকে সুস্থ হলে আবার বাসায় পৌছে দেওয়া, করোনা রোগী মৃত্যু বরণ করলে তাদেরকে গোসল, কাফনের ব্যবস্থা করা। তাছাড়া করোনাকালীন সময়ে আমরা আল মানাহিল টিম ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সৎকার করেছি। যেমন: বড়–য়া, হিন্দু, খৃষ্টানসহ সকলের যার যার রীতি অনুসারে আমরা তাদের শেষকৃত্য অনুষ্ঠান করেছি।
কবর খননের ব্যবস্থা করা, লাশের গোসলের ব্যবস্থা, লাশ দাফনের যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে যাচ্ছে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে।
“আল মানাহিল ওয়েল ফেয়ার ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ” স্বেচ্ছাসেবকরা নিরলস পরিশ্রম করে চট্টগ্রামে করোনা রোগীদের যে মানবিক সেবা দিয়ে যাচ্ছে তা একটি মানবসেবার নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এই স্বেচ্ছাসেবকরা শুধুমাত্র মানবিক কারণে এই কাজগুলো করেছেন। তাদের বেশ কয়েক জনের সাথে আলাপ আলোচনা করে জানা যায়, সম্পূর্ণ মহান আল্লাহর উপর ভরসা করে তারা দু:সাহসিক কাজে যোগদান করেছে বলে জানান, এ ব্যপারে করোনা রোগীদের সেবার, কাফন দাফনের সার্বিক দায়িত্বে থাকা “আল মানাহিল ওয়েল ফেয়ার ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ” এর প্রধান নির্বহী মাওলানা ফরিদ উদ্দীনের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, আমরা সম্পূর্ণ মহান আল্লাহর উপর আস্থা ও ভরসা রেখেই এই মানবিক কাজগুলো করে যাচ্ছি। তিনি জানান আল্লাহর হুকুম ছাড়া কিছু হয় না। রোগব্যাধি সব কিছুই মহান আল্লাহর হুকুমে হয়। তারপরও আমরা সকল স্বাস্থ্য বিধি মেনেই নিজেরাই সতর্কতা অবলম্বন করে সর্বপোরী আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ^াস রেখেই এই মহৎ কাজ গুলি করার চেষ্টা করি। তিনি আরো জানান, আমরা এখন বর্তমান সময়ে চরম বাস্তবাতার সাথে কাজ করছি। আমরা এমনও দেখেছি যে, বাবা করোনা রোগে মৃত্যুবরণ করছে হাসপাতালের মর্গে পড়ে আছে কেউ নিতে আসছে না। চট্টগ্রামের প্রশাসন আমাদের অনুরোধ করলে আমরা সেই সব লাশগুলি নিজেরাই দাফন কাফনের ব্যবস্থা করি। বর্তমান কঠিন পরিস্থিতিতে অর্থাৎ করোনা কালে সাধারণ লাশগুলিকে করোনা রোগী মনে করে ফেলে যেতো। কেউ লাশ গ্রহণ করতে আসতো না আমরা তাদেরকে পর্যন্ত দাফনের ব্যবস্থা করেছি। বর্তমানে দেশে একেতো চলছে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ। এমত অবস্থায় জনগণের দূর্ভোগের কোন সীমা নেই। এই পরিস্থিতিতে আল মানাহিল ৪টি এ্যাম্বুল্যান্স সর্বদা প্রস্তুত রাখে।
চট্টগ্রাম মহানগরীর হালিশহরস্থ আল মানাহিল জেনারেল নার্সার হাসপাতালে জরুরী সেবা এ্যাম্বুল্যান্স সহ স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী সর্বদা প্রস্তুত থাকে। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন, জেলা প্রশাসক, পুলিশ কমিশনারের কন্ট্রোল রুম থেকে আল মানাহিল ওয়েল ফেয়ার ফাউন্ডেশনের কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করলে এই সেবা পাওয়া যাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়।
এদিকে এই বিষয়ে “আল মানাহিল ওয়েল ফেয়ার ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ” এর চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দীন বিন জমির উদ্দিনের সাথে আলাপ কালে তিনি জানান, আমরা সম্পূর্ণ মানব সেবার মহান ব্রত নিয়ে এই কাজগুলি হাতে নিয়েছি। আমাদের মাধ্যমে যদি মানুষের উপকার হয়, গরীব দুঃখীদের মুখে হাসি ফুটে তাহলে আমরা নিজেদেরকে ধন্য মনে করবো। তিনি আরো জানান, আল মানাহিলের পক্ষ থেকে চট্টগ্রামের হালিশহরের ৮০ শত শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল চট্টগ্রামের পুলিশ সদস্যদের জন্য করোনা রোগী সেবার জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে সেবা দেয়ার যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমারা সকলের দোয়া চাই। আমাদের মানবিক সকল সেবাসমূহ অতীতেও ছিলো এখনো আছে ভবিষ্যতেও চলমান থকবে ইনশাআল্লাহ।
উল্লেখ্য যে, সারাদেশে “আল মানাহিল ওয়েল ফেয়াল ফাউন্ডেশন” গভীর ও অগভীর নলকূপ স্থাপন করে থাকে। তাছাড়া তারা প্রায় দেশের সব জেলায় মসজিদ নির্মাণ, অযুখানা নির্মাণ সহ স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা নির্মাণ করে দেয় অতি দরিদ্র এলাকায়। চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় কারাগারের দৃষ্টিনন্দন মসজিদ এবং চট্টগ্রাম এম এ আজিজ স্টেডিয়াম মসজিদ এই সংস্থা নির্মাণ করেছে। এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ইতিমধ্যে আল মানাহিল করোনা রোগী ছাড়াও প্রায় ১৮ শতাধিক মৃত ব্যক্তিদের জানাজা দাফন কাফনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। মনিরুল ইসলাম নামের একজন স্বেচ্ছাসেবকের সাথে আলাপে জানা যায়, আমরা এই পর্যন্ত প্রায় ১০০ টির মত বেওয়ারিশ লাশ দাফন করেছি। যাদেরকে তাদের আপনজনরা ফেলে গেছে করোনার ভয়ে। সংস্থার প্রধান নির্বাহী ফরিদ উদ্দিন জানান, জাতির এই চরম মূহূর্তে প্রত্যেক যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী জনগণের সেবায় এগিয়ে আসতে হবে। আল মানাহিল ওয়েল ফেয়াল ফাউন্ডেশন বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও গঠনমূলক ভূমিকা পালন করছে। শুরু থেকেই আল মানাহিল রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রশাসনের মাধ্যমে ঘর নির্মাণ, টিউব ওয়েল, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা, মসজিদসহ প্রভৃতি নির্মাণ করে মানব সেবার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট। ই-মেইল: kmali75@gmail.com