মঙ্গলবার, ২ মার্চ ২০২১ ০৫:৩৮ পিএম
নিউজগার্ডেন ডেস্ক: চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীর এক সংবাদ সম্মেলন আজ ২৫ জানুয়ারী চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত হয়। সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী লিখিত বক্তব্যে জানান, আগামী ২৭ জানুয়ারী বুধবার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ৭০ লক্ষ জনগোষ্ঠির অত্র শহরে ২০ লক্ষ ভোটারের সংশ্লিষ্টতায় অত্র সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে দেখা দিয়েছে। যেখানে সিটি কর্পোরেশন বা মেয়র তার কর্ম পরিধি আইন দ্বারা খুব সীমিত সেখানে ব্যাপক নির্বাচন যাহা প্রায় ৫ টি সংসদ সদস্য এলাকা নিয়ে গঠিত এই
নির্বাচনের কোন যৌক্তিকতা আছে বলে মনে হয় না। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দেশে স্থানীয় সরকার তথা নগর সরকার দুই প্রকারের আছে। কোন কোন শহরে যেখানে প্রত্যক্ষ ভোটে মেয়র নির্বাচন হয়, মেয়র একদিকে যেমন প্রধান ব্যক্তি সাথে সাথে তিনি আবার নির্বাহী বা স্থানীয় সরকারের প্রধান হিসাবে কাজ করেন। অন্যদিকে কোন কোন শহরে যেখানে মেয়রের নির্বাহী ক্ষমতা নাই সেখানে মেয়র পরোক্ষ ভোটে কাউন্সিলরদের কর্তৃক নির্বাচিত হয়ে থাকেন।
এইক্ষেত্রে চট্টগ্রামের নির্বাচন সম্পর্কে এবং নগর সরকার সম্পর্কে সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীর কিছু অভিজ্ঞতা জানান। চট্টগ্রাম শহরে পূর্বে ২৩টি ওয়ার্ড ছিল। আমার হাত ধরে ৪১ ওয়ার্ডের নির্বাচিত কমিশনারদেরকে ক্ষমতা প্রদান করে কর্পোরেশন গঠনের লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। ১৯৮৮ সালে আমি ৩য় বার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর অত্র কর্পোরেশনের প্রশাসক নিযুক্ত হই। কর্পোরেশনের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের পথে এগুতে থাকি। ১৯৮৯ সালে অত্র কর্পোরেশনের নির্বাচিত কমিশনারদের সাথে সমন্বয় করে আইন মোতাবেক চট্টগ্রাম মিউনিসিপেল কর্পোরেশন অডিন্যান্স ১৯৮২ কার্যকর করার পদক্ষেপ গ্রহণ করি। সেই সময় কর্পোরেশনের আইন অনুযায়ী আমি নিয়োগ হওয়ার পর আমাকে রাজধানীর বাইরে কোন ব্যক্তিকে প্রথম প্রতিমন্ত্রির পদে ও মর্যাদায় আসিন করা হয়। আমার হাতে প্রথম নির্বাচিত কর্পোরেশন গঠিত হয়।
অত্র কর্পোরেশনে তিন প্রকারের বা তিন ক্যাটাগরির কমিশনার বা কাউন্সিলর ছিল যথা
ক) ওয়ার্ড কমিশনার। খ) মহিলা কমিশনার। গ) অফিসিয়াল কমিশনার। এখানে অফিসিয়াল কমিশনার বলতে- ১) চেয়ারম্যান বন্দর কর্তৃপক্ষ। ২) চেয়ারম্যান চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। ৩) চেয়ারম্যান চট্টগ্রাম ওয়াসা। ৪) প্রধান প্রকৌশলী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। ৫) পরিচালক চট্টগ্রাম বিভাগিয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ৬) তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, গণস্বাস্থ্য প্রকৌশলী দফতর। ৭) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
প্রতি মাসে মাসিক সভায় তাদের অংশগ্রহণ আইন অনুযায়ী বাধ্যতামূলক ছিল। পরবর্তীতে জেনারেল ম্যানেজার রেলওয়েকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। অত্র কর্পোরেশনে অনেক অভাব ছিল। উন্নয়ন কাজ করা দুরুহ ব্যাপার ছিল। যেমন কর্মচারিদের বেতন প্রদানের ব্যবস্থা ছিল না। যেখানে প্রতি সপ্তাহে চট্টগ্রামের উন্নয়নের নামে হরতাল হত সে সময় আমার নেতৃত্বে অত্র কর্পোরেশনের আয় প্রায় ১২০০% বৃদ্ধি করে কর্পোরেশনকে নিজের পায়ে দাঁড়ানো সহ অনেক উল্ল্যেখযোগ্য কাজ করার সুযোগ হয়েছিল। ১৯৯০ সালের শুরুর দিকে ওয়ার্ড কমিশনার ও মহিলা কমিশনারদেরকে উপসচিব সমমর্যাদা প্রদান করে গেজেট প্রকাশ করা হয়।
সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী আরো জানান, ১৯৯০ সালের ১২ ডিসেম্বর সরকার পরিবর্তনের পরে আমার মেয়র নিয়োগ বাতিল করা হয়। ১৯৯১ সালের মে মাসে বিএনপি নেতা মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিনকে মেয়র হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
তৎ পরবর্তিতে নির্বাচিত কমিশনার বা কাউন্সিলরদের সরকার বাতিল ঘোষণা করেন। যার প্রেক্ষিতে কর্পোরেশনের মাসিক সাধারণ সভা আপনা আপনি বন্ধ হয়ে যায় এবং অফিসিয়াল কমিশনারদের উপস্থিতি প্রয়োজন পড়ে নাই।
১৯৯৩ সালের শেষ দিকে চট্টগ্রাম, ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী এই চার কর্পোরেশনের নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণার পূর্বে তৎকালীন জাতীয় সংসদে উক্ত অফিসিয়াল কমিশনার পদ সমূহ বিলুপ্ত ঘোষণা করে আইন প্রণয়ন করা হয়।
১৯৯৪ সালের ৩০ জানুয়ারী একযোগে চট্টগ্রাম, ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী এই চার কর্পোরেশনের নির্বাচন অনষ্ঠিত হলে ঢাকায় মোহাম্মদ হানিফ এবং চট্টগ্রামে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী বিরোধী দল থেকে নির্বাচিত হন। অফিসিয়াল কমিশনার পদ না থাকার কারণে সেই সময় থেকে মেয়রের আইনগত কর্তৃত্ব নগর সমন্বয় করা তথা নগর সরকার বা সিটি গভর্মেন্টের বিলুপ্তি সাধন হয়।
পরবর্তিতে বিভিন্ন সময়ে স্থানিয় সরকার কর্তৃক কর্পোরেশনের আইন সংশোধন হইলেও অফিসিয়াল কমিশনার পদ সৃষ্টি হয় নাই এবং মেয়রের পদ ঠুটো জগন্নাথে পরিণত হয়।
সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, বাংলাদেশের সংবিধানের ৫৯ ও ৬০ ধারায় স্থানিয় সরকার আইন গণমুখী ও জোড়ালো করার বাধ্য বাধকতা রয়েছে, কিন্তু দুঃখের বিষয় গনতান্ত্রিক সরকারের আবরনে স্থানীয় সরকারের টুটি চেপে দেয়া হয়েছে। এই মুহূর্তে যদি সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক জনদুর্ভোগ লাগবে কর্তৃত্ব না থাকে, তাহলে এত ব্যয় বহুল এবং জটিল এই ব্যাপক নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা কি আছে? আপনাদের জ্ঞাতার্থে জানাতে চাই কলকাতা শহরের মেয়র নির্বাচিত কাউন্সিলরদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে থাকে। লর্ড মেয়র অব লন্ডন ডধৎৎধঃ ড়ভ চৎবপবফবহপব অনুযায়ী ইংলেন্ডের প্রধানমন্ত্রী উপরে অবস্থান। নিউ ইয়র্ক শহরের মেয়র নিউ ইয়র্কের পুলিশ কমিশনার সহ সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ পদের নিয়োগ প্রদান করেন এবং তিনি প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত মেয়র।
পরিশেষে বাংলাদেশের সংবিধানের ধারাবাহিকতায় স্থানীয় সরকার হিসাবে অত্র সিটি কর্পোরেশন যদি শক্তিশালী না হয় তাহলে জনগণ গনতান্ত্রিক স্বাদ পাওয়ার জন্য কোথায় ধর্ণা দিবে ? বাংলাদেশে প্রায় ১০টি সিটি কর্পোরেশন আছে কিন্তু চট্টগ্রামের সমস্যা ও গুরুত্ব প্রত্যেক কর্পোরেশন থেকে অধিক গুরুত্ববহ। বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামকে বিশেষ বিবেচনায় রাখতে হবে।
এই মুহূর্তে সিটি কর্পোরেশনের আইন যদি সংশোধন করা না যায় তাহলে স্থানীয় সরকার কমিশন গঠন করা যেতে পারে এবং সেখানে সিটি কর্পোরেশন সমূহ, উপজেলা, জেলা পরিষদ ইত্যাদিও সমস্যা ও ক্ষমতার পরিধি সহ সমাধানের সুপারিশ করার ক্ষমতা থাকতে হবে।
অন্যথায় চট্টগ্রাম নগর বা বৃহত্তর চট্টগ্রামের জন্য প্রধানমন্ত্রী সচিবালয়ের অধিনে একটি চট্টগ্রামের সমস্যার উপর অভিজ্ঞ নেতৃত্বের দ্বারা সমন্বয় কমিটির মাধ্যমে সমস্ত সংস্থার প্রতিনিধীর অংশ গ্রহণে একটি সমন্বয় কমিটি করা যেতে পারে। এই কমিটি সমস্ত প্রকল্প প্রণয়ন, যথাসময়ে বাস্তবায়ন, স্বচ্ছতা সহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের নৈসর্গিক সৌন্দর্য রক্ষা করে কাজ করতে পারে।
সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, ১৯৮৯-৯০ সালে আমার হাতে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের নতুন ভবনের ভিত্তি স্থাপিত হয়। প্রকৃতির এক লিলাভূমী চট্টগ্রাম। চট্টগ্রামের মত পৃথিবীর কম শহর আছে যেখানে সৃষ্টিকর্তা পর্বত পাহাড় নদী ও লেকের সংমিশ্রনে এই রকম শহর সৃষ্টি হয়েছে। প্রকৃতির এই অবদান যোগ করেছে চট্টগ্রাম বন্দর। অভিবক্ত ভারতে এই বন্দরের গুরুত্ব অনুধাবন করে আসাম বেঙ্গল (উভয় বাংলা) রেলওয়ের সদর দফতর চট্টগ্রামে নির্বাচিত হয়েছিল। প্রসঙ্গক্রমে আমার মরহুম পিতা খান বাহাদুর বদি আহমদ চৌধুরী সাবেক এম এল সি এবং এম এল এ অনেক বছর যাবৎ আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে বোর্ডের সদস্য ছিলেন। বর্তমান সি আর বি বিল্ডিং সেই ইতিহাসের কালের স্বাক্ষী। বার আউলিয়ার এই চট্টগ্রামে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্টন সহ অত্র এলাকায় মাষ্টার দ্যা সূর্য সেনের ত্যাগ এখনো মানুষের স্মৃতিতে অম্লান।
সাবস্ক্রাইব ইউটিউব চ্যানেল
লাইক ফেইসবুক পেইজ
নিউজগার্ডেন ডেস্ক: সাধ্যমত সবসময় মানুষের পাশে থেকে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ১৬ নং সাতকা... বিস্তারিত
নিউজগার্ডেন ডেস্ক: সাধারণভাবে কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা বা সিএসআর কার্যক্রম বললেই সবার চোখের ... বিস্তারিত
নিউজগার্ডেন ডেস্ক: চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, লালদিয়ার চর এলাকার ... বিস্তারিত
নিউজগার্ডেন ডেস্ক: চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এম, রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, একুশ মানে স্বা... বিস্তারিত
ডা.মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ: আজ মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। আজ সবার সব পথ এসে ... বিস্তারিত
নিউজগার্ডেন ডেস্ক: চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নব-নির্বাচিত মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করি... বিস্তারিত
নিউজগার্ডেন ডেস্ক: চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)-এর পুরকৌশল অনুষদের আয়োজনে... বিস্তারিত
নিউজগার্ডেন ডেস্ক: চন্দনাইশ উপজেলার পর্যটন সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচনের অপেক্ষার নগরী ক্ষ্যা... বিস্তারিত
নিউজগার্ডেন ডেস্ক: চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এম. রেজাউল করিম চৌধুরী আজ মঙ্গলবার বেলা ১ টায় ... বিস্তারিত
নিউজগার্ডেন ডেস্ক: চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এম. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, সংবাদপত্র শুদ... বিস্তারিত