শুক্রবার, ৯ জুন ২০২৩ ১২:৪৩ এএম
নিউজগার্ডেন ডেস্ক, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২০ ইংরেজী, বুধবার: তিল ধারণের ঠাঁই নেই চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে। যে কক্ষে ১০ জন বন্দি থাকার কথা সেখানে থাকছে ৩৫ থেকে ৪০ জন। এরপরও রুমে জায়গা নেই। এ কারাগারে বন্দি ধারণ ক্ষমতা ১ হাজার ৮৫৩ জন হলেও বর্তমানে বন্দি আছে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার। যা ধারণ ক্ষমতার চেয়ে চার গুণেরও বেশি। গাদাগাদি করে থাকতে গিয়ে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তবে কারা অভ্যন্তরে ১০০ শয্যার হাসপাতাল থাকলেও বন্দিদের চিকিৎসায় ডাক্তার আছেন মাত্র একজন। এত বন্দির স্থান সংকুলানে হিমশিম খাচ্ছে কারা কর্তৃূপক্ষ। কারাগারে
অত্যাধুনিক একটি অপেক্ষাগার নির্মাণ করা হচ্ছে। সেখানে বন্দিদের সাক্ষাতে আসা স্বজনরা অপেক্ষা করতে পারবেন। ওই অপেক্ষাগারে ৪০০ লোক বসার ব্যবস্থা থাকছে। পিএইচপি ফ্যামিলীর অর্থায়নে এটি নির্মাণ করা হচ্ছে। আত্মীয়-স্বজন কর্তৃক দেখা সাক্ষাতে বন্দিদের মাঝে যাতে কোন ধরনের মাদক সরবরাহ করতে না পারে সে বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষ প্রতিনিয়ত বিশেষ নজরদারী রাখছে।সূত্র জানায়, ১৮৮৫ সালে চট্টগ্রাম জেলা কারাগার প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কারাগার। ১৯৯৯ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ১৬ দশমিক ৮৭ একর জায়গার ওপর গড়ে তোলা হয় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার। এর মধ্যে কারাভ্যন্তরে ভূমির পরিমাণ ১১ দশমিক ৫৫ একর। কারাগারের বাইরে ভূমির পরিমাণ পাঁচ দশমিক ৩২ একর।
কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গছে, এ কারাগারে রয়েছে ১২৮টি ওয়ার্ড। মোট বন্দির সংখ্যা ৭৫০৯ জন। ধারণ ক্ষমতার চার গুণেরও বেশি বন্দি কারাগারে রয়েছে। এখানে রয়েছে নারী ওয়ার্ড, সেল ভবন, ভিভিশন ভবন, শেখ রাসেল ভবন। রয়েছে ৪৭টি সেল।
মোট ধারণ ক্ষমতা ১৮৫৩ জনের মধ্যে পুরুষ ১৭৪৮ জন ও নারী ১০৫ জন থাকার কথা রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে নারী রয়েছে ৩০৫ জন ও পুরুষ রয়েছেন ৭১৯৪ জন। তাছাড়া প্রতিদিনই নতুন নতুন বন্দি কারাগারে আসছে। বন্দিদের মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত ৮৬২ জন, ফাঁসির দ-প্রাপ্ত রয়েছেন ৫৭ জন। এর মধ্যে নারী রয়েছেন ২ জন। শতাধিক জঙ্গি রয়েছেন এ কারাগারে। এরা হুজি, জেএমবি, নব্য জেএমবি, আল্লাহর দল, হিযবুত তাহরীর, আনসার আল ইসলাম, হামজা ব্রিগেড সহ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের নেতা ও সদস্য। ১০ থেকে ১৫ জন রয়েছেন দুর্ধর্ষ জঙ্গি। অর্ধশতাধিক দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীও রয়েছে এ কারাগারে। কারাগারের ছয়টি ভবনের ১২৮টি ওয়ার্ডে গাদাগাদি করে থাকছেন সাড়ে সাত হাজারেরও বেশি বন্দি। ওয়ার্ডের বাইরে বারান্দায় থাকছেন অনেক বন্দি।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় সিনিয়র জেল সুপার মো. কামাল হোসেন জানান, ধারণ ক্ষমতার চার গুণেরও বেশি বন্দি রয়েছে এ কারাগারে। তাদের রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তারপরও সুশৃঙ্খলভাবে বন্দিদের রাখা হয়েছে। কোন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে না। কঠোর নজরদারিতে থাকে প্রতিটি বন্দি। বিশেষ করে জঙ্গি, দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী, দাগি অপরাধীদের চোখে চোখে রাখা হয়।
তিনি বলেন, নতুন করে ভবন তৈরি না করা পর্যন্ত এ সমস্যা থাকবে। সরকার নতুন নতুন ভবন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। সেটি বাস্তবায়ন করা হলে সমস্যা আর থাকবে না। বন্দিদের বিনোদনের জন্য টেলিভিশন ও খেলাধুলার ব্যবস্থা রয়েছে। কারাগারে সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। সবাইকে ভালভাবে রাখার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
সূত্র মতে, সাম্প্রতিক সময়ে কারাগারে বন্দির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কারাগারের ওয়ার্ড, সেল, হাসপাতাল কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। বিশেষ করে মাদকবিরোধী মামলার আসামির সংখ্যা বাড়ায় বন্দির থাকার জায়গা সংকুলান করতে বেগ পেতে হচ্ছে। যে হারে বন্দি বাড়ছে তার তুলনায় জামিন পাওয়া বন্দির সংখ্যা অনেক কম বিধায় প্রতিদিনই বন্দির সংখ্যা বাড়ছে।
বন্দি রাখতে চট্টগ্রাম কারাভ্যন্তরে মাস্টারদা সূর্যসেন, তারকেশ্বর দস্তিদার, পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, সাঙ্গু, কর্ণফুলী ও হালদা নামে ভবন রয়েছে। ওয়ার্ড রয়েছে ১২৮টি। এ ছাড়া একটি ডিভিশনপ্রাপ্ত ভিআইপি বন্দি ব্যারাক, দুটি ফাঁসির আসামির কনডেম সেল, তিন তলা বিশিষ্ট নারী বন্দি ব্যারাক, একটি সাজাপ্রাপ্ত নারী বন্দি ব্যারাক, একটি নারী কনডেম সেল, দুই তলাবিশিষ্ট একটি শিশু-কিশোর বন্দি ব্যারাক, একশ শয্যার তিন তলাবিশিষ্ট কারা হাসপাতাল সবখানে ঠাসাঠাসি করে রাখা হয়েছে বন্দিদের।
জানা গেছে, নগরীর ১৬ থানা এবং জেলার ১৬ থানাসহ মোট ৩২ থানার বিভিন্ন মামলার আসামি ও সাজাপ্রাপ্ত কয়েদিকে রাখা হয় এ কারাগারে। প্রতিদিন গড়ে একশ’ আসামি জামিনে মুক্তি পেলেও বিভিন্ন মামলায় কারাগারে আসছে ১৫০ থেকে ২০০ আসামি।
কেন্দ্রীয় কারাগারে সকল শ্রেণীর বন্দি রাখা হয় বিধায় সেখানে তাদেরকে দিয়ে বিভিন্ন রকমের প্রশিক্ষণ ও পণ্য সামগ্রী উৎপাদন করা হয়। কারাগারে বাঁশ ও বেতের হরেক রকম সামগ্রি, তাঁতের কাপড়, পোশাক, কাঠের আসবাবপত্র ইত্যাদি তৈরী করা হয়। কারাগারে বন্দিদের ইলেকট্রনিক সামগ্রি মেরামতের প্রশিক্ষণ (যথা-টিভি, ফ্রিজ প্রভৃতি) দেয়া হয়। বন্দিরা নিজেদের খাবার নিজেরাই তৈরী করে বিধায় রান্না প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। মুক্তিপ্রাপ্ত হয়ে অনেক বন্দি পেশাদার বাবুর্চি হিসেবে রেস্টুরেন্টে কাজ করার সুযোগ পায়। স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি বিশেষ বিশেষ দিবসে বন্দিদের মাঝে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়
জানা গেছে, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃত মাস্টারদা সূর্য সেন ১৬ ফেব্রুয়ারী ১৯৩৩ সালে পটিয়া থানার ধলঘাটা গ্রামে ব্রিটিশ সৈন্য কর্তৃক গ্রেপ্তার হন। ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার পূর্ববর্তী সময় পর্যন্ত তিনি চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দী অবস্থায় ছিলেন। ১২ জানুয়ারী ১৯৩৪ সালে চট্টগ্রাম কারাগারে মাস্টারদা সূর্যসেন এবং তার অন্যতম সহযোগী বিপ্লবী তারেকেশ্বর দস্তিদার এর ফাঁসি কার্যকর করা হয়। ব্রিটিশদের কাছ থেকে চট্টগ্রাম স্বাধীন করে রাখা বিপ্লবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ও ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা হিসেবে ফাঁসির মঞ্চটি বর্তমানে সংরক্ষিত আছে।
বন্দিদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য তিন স্লিপ পদ্ধতি চালু রয়েছে। অর্থাৎ স্লিপের একটি অংশ বন্দির কাছে, একটি অংশ স্বজনদের কাছে এবং আরেকটি অংশ কর্তৃপক্ষের কাছে থাকে। কোন ধরনের ফি ছাড়াই সাক্ষাৎ করা যায় বলে জানান সিনিয়র জেল সুপার মো. কামাল হোসেন।
তিনি বলেন, বন্দিদের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তাদের তৈরি করা পণ্য বিক্রি করে অর্ধেক মুনাফা তাদেরকে দেয়া হয়। তাদেরকে আনন্দে রাখার সকল ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
তিনি জানান, কেন্দ্রীয় কারাগারে অত্যাধুনিক একটি অপেক্ষাগার নির্মাণ করা হচ্ছে। সেখানে বন্দিদের সাক্ষাতে আসা স্বজনরা অপেক্ষা করতে পারবেন। ওই অপেক্ষাগারে ৪০০ লোক বসার ব্যবস্থা থাকছে। পিএইচপি ফ্যামিলীর অর্থায়নে এটি নির্মাণ করা হচ্ছে।
সাবস্ক্রাইব ইউটিউব চ্যানেল
লাইক ফেইসবুক পেইজ
নিউজগার্ডেন ডেস্ক: আজকের পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের প্রেক্ষিতে যথাযথ তথ্যাদি তুলে ধরার উদ্দ... বিস্তারিত
নিউজগার্ডেন ডেস্ক: এক অনাড়ম্বর ও জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম জেলা আই... বিস্তারিত
নিউজগার্ডেন ডেস্ক: চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সভাপতিসহ ৯টি পদে বিএনপি-জামায়াত সমর্... বিস্তারিত
নিউজগার্ডেন ডেস্ক: চাঞ্চল্যকর শিশু বর্ষা ধর্ষণ ও হত্যা মামলার অগ্রগতি রিপোর্ট তলবের জন্যে সংবাদদ... বিস্তারিত
নিউজগার্ডেন ডেস্ক: লক্ষীপুর, নোয়াখালী, ফেনী তিন জেলার সমন্বয়ে গঠিত বৃহত্তর নোয়াখালী আইনজীবী কল্য... বিস্তারিত
নিউজগার্ডেন ডেস্ক: আজ ২১ সেপ্টেম্বর (বুধবার) আনোয়ারা থানা পুলিশ সিআর ৫৩/২০২২ মামলার ১ নং আসামী মো. আ... বিস্তারিত
নিউজগার্ডেন ডেস্ক: আগামী ১৪ জুন, বুধবার চট্টগ্রাম মহানগরে “দেশ বাঁচাতে তারুণ্যের সমাবেশ” সফল ক... বিস্তারিত
নিউজগার্ডেন ডেস্ক: চট্টগ্রাম-১০ আসনের উপ-নির্বাচন আগামী ৩০ জুলাই। ২০-তম কমিশন বৈঠক শেষে বৃহস্পতিব... বিস্তারিত
নিউজগার্ডেন ডেস্ক: Intregrated Supply Chain Management বিষয়ে ডিপ্লোমা কোর্স চালুর বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদ... বিস্তারিত
নিউজগার্ডেন ডেস্ক: কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ সভাপতি ও চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দ... বিস্তারিত